আসনটি ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের দৃঢ় ঘাঁটি। ১৯৮৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি নির্বাচনে (২টি উপ-নির্বাচনসহ) আওয়ামী লীগ ৭ বার জয়ী হলেও, এবারের নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত উত্তাপ দেখা দিয়েছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং টেন্ডার-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভ জামায়াত ইসলামীকে এগিয়ে রাখছে।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের মোট ভোটার: ৬,১৯,৯৫৮ জন (পুরুষ ৩,১৩,৯০৪; নারী ৩,০৬,০৫১)। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ভোটার ৪,৫৬,৩৯২ জন (পুরুষ ২,৩১,৮৪২; নারী ২,২৪,৫৪৭; হিজড়া ৩) এবং রাজনগর উপজেলায় ১,৬৩,৫৬৬ জন (পুরুষ ৮২,০৬২; নারী ৮১,৫০৪)। ১৯৮৬-২০২৪ পর্যন্ত ১১টি নির্বাচনে *আওয়ামী লীগ জিতেছে ৭ বার*, বিএনপি ৩ বার, জাতীয় পার্টি ১ বার। এ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আ. লীগের “নিরাপদ ঘাঁটি” হিসেবে পরিচিত।
আগামী জাতীয় নির্বাচন-এর চ্যালেঞ্জ: আ. লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটার কোথায় যাবে?
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরাসরি অংশ নিতে না পারায়, তাদের ৪০% ভোটব্যাংক (ইতিহাসের সূত্রে) এখন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর টার্গেট। মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ও বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির চেয়ে এগিয়ে থাকলেও, চূড়ান্ত লড়াই নির্ভর করছে দুই দলের কৌশল ও আ. লীগ সমর্থকদের ভোটের প্রবণতায়।
জামায়াতের এগিয়ে থাকার ২ কৌশলগত কারণ: ১. বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল:
• স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বে তীব্র বিভক্তি। একাংশের অভিযোগ, “দলীয় উচ্চকম্যান্ড স্থানীয় চাহিদা উপেক্ষা করছে।”
• নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রচারণাকে দুর্বল করছে। ২. টেন্ডার বাণিজ্য ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে জামায়াতের জুজু :
• আ. লীগ শাসনামলে উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, চাঁদাবাজি ও টেন্ডার দখল-এর অভিযোগে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।
• জামায়াত ধর্মীয় প্রভাব ও সংগঠিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে “বিকল্প শক্তি” হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
মাঠের কণ্ঠস্বর: “বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না হলে ভোট বিভক্ত!”
• রাজনগরের স্কুলশিক্ষিকা রিনা আক্তার বলেন :
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা, কিন্তু বিএনপি বিভক্ত। জামায়াতের নেতারা সরাসরি মানুষের দুঃখ শোনেন।”
• স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিব বলেন :
“টেন্ডার মাফিয়াদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস জামায়াত দেখিয়েছে। বিএনপি যদি দলীয় কোন্দল না মেটায়, ভোট ভাগ হবে।”
বিশ্লেষকের দৃষ্টিভঙ্গি: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফারুক আহমেদের মতে, “বিএনপি কোন দুর্বল সংগঠন নয় কিন্তু স্থানিয় কিছু নেতাকর্মীদের আচরণে সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ! জামায়াতের কর্মীরা ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছে সম্মান দিচ্ছে, যা বিএনপির ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। তবে, আ. লীগের ভোটাররা জামায়াতকে সমর্থন দেবে কিনা—সেটাই নিষ্পত্তিকর ফ্যাক্টর।”
চূড়ান্ত প্রক্ষেপণ: কে জিতবে আ. লীগের ‘ভোটের খালাসে’?
• বিএনপির সুযোগ: দলীয় কোন্দল মেটালে এবং আ. লীগ আমলের দুর্নীতিকে কাউন্টার-ক্যাম্পেইনের কেন্দ্রে রাখলে ভোটার ফেরানো সম্ভব।
• জামায়াতের জয়রথ : বিএনপির দুর্বলতাকে ফুল ইউটিলাইজ করে এবং ধর্মীয়-সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আ. লীগের ভোটারদের আকর্ষণ করাই তাদের মূল হাতিয়ার।
শেষ কথা : মৌলভীবাজার-৩ আসনে “নির্বাচন নয়, যুদ্ধ” চলছে! বিএনপির বিভক্তি ও জামায়াতের সংগঠিত মেশিনারির মধ্যে টানটান উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি এই লড়াইকে করে তুলেছে অপ্রত্যাশিত রোমাঞ্চকর। জামায়াত কি ইতিহাসের প্রথমবারের মতো এই ঘাঁটি দখল করবে? নাকি বিএনপি শেষ মুহূর্তের জোট-কৌশলে উল্টে দেবে খেলা? উত্তর দেবে ভোটের দিন!